প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিতে কমছে বই প্রীতি

S M Ashraful Azom
প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিতে কমছে বই প্রীতি
রকি চন্দ্র সাহা চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধিঃ প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিতে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীদের বই প্রীতি। কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, প্রযুক্তির কারণে সাধারণ মানুষও বই থেকে দূরে থাকছে। ফলে চাঁদপুরে একাধিক পাঠাগার থাকলেও সেগুলোতে পাঠক পাওয়া যাচ্ছে না। সচেতন মানুষ মনে করছেন, মানুষের চিরকালের বন্ধু বই থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রযুক্তির ব্যবহার হবে জীবনের প্রয়োজনেই। একে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রযুক্তির আসক্তি ও অপব্যবহারের কারণে বই পড়া থেকে দূরে থাকছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ-এটি উদ্বেগের বিষয়।


অভিভাবক মুরাদ হোসেন বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয় আর কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য বই পড়তে আগ্রহ হারাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে ব্যাপক অংশ ইন্টারনেট, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি ঝুঁকেছে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল ইব্রাহিম মনে করেন, ফেসবুক আসক্তির কারণে কমছে বইপ্রীতি।
প্রবাসী লেখক জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার কেবল বই নয়, সামাজিকতা থেকেও মানুষকে দূরে রাখছে। প্রজন্মকে বইমুখী করতে হলে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।
অনেকে মনে করেন, বর্তমানে ভালো ভালো বই প্রকাশ হচ্ছে না। সেকারণে বই পাঠ প্রীতি কমছে। অনেকে দায়ী করছেন প্রকাশকের মানহীন বই প্রকাশকে। বজলুল করিম বলেন, আজ নানা কারণে বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারে বইপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে মানুষ। অন্যদিকে রয়েছে ভালো লেখার অভাব।
চাঁদপুরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী বলেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার কল্যাণকর নয়। মানুষের বই পাঠ কমার পেছনে প্রযুক্তির অপব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত আসক্তির কারণে কেবল শিক্ষার্থীরা নয়, সব শ্রেণির মানুষই বইকে দূরে সরিয়ে রাখছে।
কেউ কেউ মনে করেন বই বিমুখতার জন্য দায়ী ব্যস্ত জীবনব্যবস্থা। আজকের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই কোচিং-স্কুল-প্রাইভেট-কোচিং চক্রে বন্দী। ফলে পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়ার অবসর মিলছে না তাদের। চাঁদপুর সরকারি কলেজের গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা বলেন, কেবল প্রযুক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হচ্ছে না। অনেকগুলো কারণ এর জন্য দায়ী। প্রযুক্তি তার একটি মাত্র। আগে বেশিরভাগ পরিবারে পারিবারিক গ্রন্থাগার ও বাসায় বই পড়ার প্রচলন ছিল। এখন সেটা কমে এসেছে।
তিনি বলেন, কেবল জিপিএ-৫ প্রাপ্তির জন্য পড়লেই হবে না, ভালো মানুষ হওয়ার জন্য, সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পড়তে হবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ভালো মানের গ্রন্থাগার ও বই পাঠের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মানুষের মাঝে বইপ্রীতি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রবাসী লেখক জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় বলেন, শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে হলে বাবা-মা ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। মা-বাবা ও শিক্ষকবৃন্দ বই পড়তে শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করবেন। সপ্তাহে একদিন ৩০ মিনিট বই পাঠের একটি ক্লাস থাকতে পারে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি এবং অপব্যবহারের প্রভাব জীবনের নানাক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। বই পড়ায় প্রভাব তো পড়ছেই। অনেক শিক্ষার্থীকে 'শেষের কবিতা', 'দুই বিঘা জমি' কিংবা 'বনলতা সেন' কবিতার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, এসব কবিতার কথা তারা কখনো শোনেনি। এটি দুঃখজনক বিষয়।
তিনি বলেন, সমৃদ্ধশালী জাতি গড়ে তুলতে হলে বই পাঠের বিকল্প নেই। মানুষের মনের উৎকর্ষতা লাভের জন্যে বই পড়া বাড়াতে হবে। সেজন্য প্রযুক্তির অপব্যবহার দূর করতে হবে। আর মনের উৎকর্ষতা লাভ হলেই একজন মানুষ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন প্রকৃত মানবে পরিণত হতে পারে।




#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top