মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ |
সেবা ডেস্ক: যে ক’জন বিদেশি সাংবাদিক ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে হত্যার ঘটনায় রিপোর্ট করেছিলেন, লরেন্স লিফশুলজ তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী সংঘাতময় নভেম্বর মাসের ঘটনাবলি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন প্রখ্যাত এই আমেরিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিক। ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সাল জুড়ে তার কর্মক্ষেত্র ছিল দক্ষিণ এশিয়া। বহু গ্রন্থের প্রণেতা লরেন্স লিফশুলজ কর্নেল তাহের ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা নিয়ে লিখেছেন ‘বাংলাদেশ : দি আনফিনিশড রেভ্যুলিউশন’। ‘অ্যানাটমি অব ক্যু’ নামের সিরিজ রচনায় তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ-এর সাবেক এই দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি এবং গার্ডিয়ানের নিয়মিত লেখক বারবার ১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত অজানা অধ্যায়ের নতুন দরোজা উন্মোচন করেছেন।
আগস্ট ১৫, ১৯৭৫
যেকোনও বার্ষিকী, তা আনন্দের হোক আর বেদনার হোক; আমাদের সেইসব ঘটনা আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, একসময় আমরা যাদের চিনতাম। প্রতি বছর যখন এইসব দিন আসে, আমরা মনে করার চেষ্টা করি কী ঘটেছিল সেই দিন। কখনও কখনও আমরা অতীত খুঁড়ে বিস্তৃতভাবে ঘটনা বিশ্লেষণ না করে সংক্ষিপ্তভাবে তা স্মরণ করি আর আমাদের ভাবনা অব্যাহত রাখি। আবার এমন সময় আসে, যখন আমরা বিরতিতে থাকি। অতীতের ঘটনা নিয়ে গভীর বিবেচনার স্বার্থেই আমাদের থামতে হয়। আমরা তখন ভাবনা জমা করতে থাকি, মূল্যায়ন করতে থাকি। একজন লেখকের ক্ষেত্রে এটাই হলো যথাযথ কর্মপ্রক্রিয়া। অতীতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবনা জারি রাখা আর এর পুনর্মূল্যায়ন করা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার ক্ষেত্রে তেমনই একটা দিন। আগে একবার আমি বলেছিলাম, ১৫ আগস্ট উইলিয়াম ফকনারের এক উক্তিকে মনে করিয়ে দেয়। তা হলো অতীতের মৃত্যু হয় না কখনও, এমনকি অতীত বলে কিছু নেই। বছরের পর বছর আমি থেমে ছিলাম। অতীতকে স্মরণ করার চেষ্টায় রত ছিলাম। আর তারপর যখন সেইসব স্মৃতিরা ফিরতে শুরু করে তখন আমি অন্যান্য কাজকর্মে লিপ্ত হই। যাহোক, থেমে থাকার পর এই বছর আমি একটি পুরনো ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই ইতিহাস কেবল বাঙালিদের নয়, আমার মতো আমেরিকানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। একটি ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায় এসব হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়ে উঠেছিল। সেসব হত্যাকাণ্ডে কেবল কি বাংলাদেশিরাই জড়িত ছিলেন? নাকি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমনকি হত্যার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল? বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যারা হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার বানানোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এই ধারার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত। আজ আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সহিংসতার কথা স্মরণ করছি। ঘটনার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ওই বছরের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর (জেলহত্যা দিবস) সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ায় ঘাটতি রয়েছে। আমাদের হাতে প্রচুর জিনিস এখন রয়েছে। এমনকি নতুন তথ্যও রয়েছে। সম্ভবত এর মধ্য দিয়ে অতীতের ওই ঘটনার বোঝাপড়ায় আমরা নতুন দিশা পাবো এবং আমাদের বোঝাপড়ার পরিসর বিস্তৃত হবে।
ঢাকার এক বৈঠক থেকেই অভ্যুত্থান
কিছু দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আমি এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সম্পর্কে ভাবছিলাম আমি। ভাগ্য ভালো যে আমরা দুইজনই জীবিত আছি। ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল আমার। আমার পাশে বসে ধীরস্থিরভাবে তিনি আমাকে জানালেন, আমাকে তার জরুরি কিছু বলার আছে। এই একটা কথাই তিনি আমাকে বলেছিলেন, তবে সে সময় তিনি খুব গম্ভীর ছিলেন।
আমরা একে অপরকে চিনতাম। তবে খুব বেশি জানাশোনা ছিল না আমাদের পরস্পরের সম্পর্কে। তবে তার দুর্দান্ত এক সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা জানতাম আমি। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। সেদিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকাতে তার বাড়িতে ছিলাম। পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। আমাকে এক জমায়েতে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে অনেক ভিড় ছিল, একান্ত আলাপ করাটা ছিল দুঃসাধ্য। পরদিন সন্ধ্যায় সেখানে আবারও যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। আমি তাকে বললাম, পরদিন নির্ধারিত সময়ে তার সঙ্গে আমার দেখা হবে।
অবশ্য, পরদিন আমি গ্রেফতার হওয়ার কারণে সে কথা রাখতে পারিনি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে রিপোর্ট করতে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। যে কেউই একে বিচার বলে অভিহিত করতে বিব্রতবোধ করতো। এটি ছিল এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একসময় এই তাহেরই জিয়ার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির জন্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমেই তাহেরের বিচার সংক্রান্ত খবরটি পুরোপুরিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হলো। আমার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবিসির বাংলা সংস্করণে প্রথম তাহেরের বিচারের খবরটি প্রকাশ পায়।
ব্যাংককে রয়টার্সের অফিসে আমার প্রতিবেদন পাঠানোর পথ পেয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সেগুলো হংকং ও লন্ডনে আমার সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হলো। ঢাকা টেলেক্স অফিস থেকে আমার প্রতিবেদন আদান-প্রদান প্রক্রিয়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হলো। আমাকে তিনদিনের জন্য আটকে রাখার পর ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ততক্ষণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সেন্সরশিপ আরোপের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানওই ভদ্রলোক কী বলতে চেয়েছিলেন তা শোনার জন্য আমি আর সময় নির্ধারণ করতে পারিনি। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আমি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঢাকায় যাই এবং সিদ্ধান্ত নিই ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করব। দেখা করার পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার জন্য তার কাছে ক্ষমা চাইব। আমার পক্ষে এতটুকুই করার ছিল। তবে এত বছর আগে তিনি আমাকে কী বলতে চেয়েছিলেন তা জানার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। আমি তার অফিসের খোঁজ পেলাম এবং তিনি আমাকে দ্রুত দেখা করতে বললেন। আমি পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ের সে দিনটিতে দেখা না করায় তিনি আমাকে খানিক তিরস্কার করলেন। জিজ্ঞেস, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর সেই রাতেই আপনার গ্রেফতার হতে হলো?’ আসলে দেখা করতে না পারার সেই ঘটনায় তিনি আমাকে ক্ষমাই করে দিয়েছিলেন। চা দেওয়া হলো। তার আস্থাভাজন এক ব্যক্তি যেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে, তিনি তার ব্যবস্থা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন তা মনে আছে কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘এ তো মনে হচ্ছে গতকালকের কথা।’ এরপর তিনি পুরোপুরি গুরুগম্ভীর হয়ে গেলেন।
পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি মজার এক গল্প শোনালেন। পরবর্তী বেশ কিছুদিন তার বাড়িতে দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা। তার স্ত্রী ছিলেন সেই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে অতিরিক্ত তথ্যও যুক্ত করছিলেন তিনি। আসলে আমাকে তিনি তাই বলেছিলেন, ৩০ বছর আগে যা বলার কথা ছিল। ঘটনাগুলো ছিল ১৫ আগস্টের কাছাকাছি সময়ের, যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু আছে। নিজের ব্যবসার কারণে এসব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তার একজন বন্ধু আছে। তিনি রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। ওই মার্কিনিকে সুদর্শন ও চমৎকার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করলেন তিনি। বললেন, বাংলাদেশের জন্য তার অনেক প্রেম আছে। মাঝে মাঝে তারা ওই ব্যক্তির মালিকানাধীন কারখানা পরিদর্শনের জন্য দুইজন একই গাড়িতে করে যেতেন। বাংলাদেশ কত সুন্দর দেশ, এ কথাটা ফিলিপ চেরি যেভাবে বলতেন তা মনে আছে তার। ১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ডেকে বলেছিলেন, তিনি তার বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারে কিনা। ওই ভদ্রলোক বলেছিলেন, তিনি সেটা করতে পারলে আনন্দিত হবেন। ফিলিপ চেরি কি নির্দিষ্ট কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলেন? আয়োজককে চেরি নিশ্চিত করলেন যে তিনি চান কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নাই। ওই অতিথি হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। সেই ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজ আয়োজিত হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে তাদের পাশাপাশি আয়োজক ও তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
আয়োজক বললেন, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তার স্ত্রী মনে করেন, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। ওই নৈশভোজে ওই দুই ব্যক্তির পৌঁছানোর পর পরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা তাদের নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে চাইছেন।
জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেলেন এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বললেন। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো ওনারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবারও বাগানে গেলেন এবং আলোচনা করতে লাগলেন। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছেন। অবশ্য, অভ্যুত্থানের পর সে নৈশভোজের আয়োজক ও তার পরিবার বুঝতে পারলো তাদের ‘ব্যবহার’ করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরদিন নৈশভোজের সে আয়োজক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। নৈশভোজ আয়োজনকারী সে ব্যক্তি ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তার চোখে ছিল অশ্রু। কীভাবে এটা হয়েছে তা জানতে চাইতে থাকেন তিনি। তিনি মুজিবের স্ত্রীকে ‘নিজের মায়ের মতো’ বলে উল্লেখ করেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে নৈশভোজ আয়োজনকারী ওই ব্যক্তি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?’
চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন, তাকে চা দিয়েছিলেন। চেরি তাকে বলছিলেন, ‘আমি জানি তুমি আমাদের পরিবারের খুব কাছের মানুষ। রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের গাড়িতে করে চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানে, জিয়া-চেরির এই ডিনার কোনও সামাজিক উদ্দেশ্যে নয়। তারা ভালো করেই জানত, সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়ার ভূমিকা কী ছিল। সেনাবাহিনীকে মেজরমুখী করতে জিয়া কী করেছেন। তারা জানত, ১৫ আগস্টের কিছু সময় আগে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের টার্গেট নেওয়া মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের কর্মকাণ্ড থেকে সেনাবাহিনীর মনোযোগ সরিয়ে দিতে তিনি কী করেছিলেন।
অনেকেই বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জেনারেল জিয়া এর বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।
চেরি-জিয়ার বৈঠক যে বাসায় হয়েছিল, ঢাকা সফরের সময় এক সন্ধ্যায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের কাছে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিলেন তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে যান। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমার পূর্বের লেখাতেও স্পষ্ট করেছি যে চেরি সিআইএ স্টেশন প্রধানই ছিলেন। একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেপথ্যে কারা?
আমরা এখন স্পষ্টই বুঝি যে সামরিক অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও আমেরিকার সিআইএ স্টেশন চিফের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্ট করে দূতাবাসের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যে মুজিব পতনের সঙ্গে জড়িত কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না করা হয়।
১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে শক্তিশালী করতে চাইছিলো। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় একটি আবাসিক ভবনে বৈঠকে বসেন। কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলির কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশমতো কাজ করেছিলেন।
ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন, রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনকে যদি এ সম্পর্কে অবগত না করা হতো, সেক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন হয়ে যেতে পারত। ফোর্টি কমিটি আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এখনকার ভয়ঙ্কর যোগসূত্রের মতো করেই সিআইএ-ওয়াশিংটন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অভ্যুত্থানটি সম্ভব করে তুলেছিল।
ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো। তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।
পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি মজার এক গল্প শোনালেন। পরবর্তী বেশ কিছুদিন তার বাড়িতে দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা। তার স্ত্রী ছিলেন সেই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে অতিরিক্ত তথ্যও যুক্ত করছিলেন তিনি। আসলে আমাকে তিনি তাই বলেছিলেন, ৩০ বছর আগে যা বলার কথা ছিল। ঘটনাগুলো ছিল ১৫ আগস্টের কাছাকাছি সময়ের, যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু আছে। নিজের ব্যবসার কারণে এসব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তার একজন বন্ধু আছে। তিনি রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। ওই মার্কিনিকে সুদর্শন ও চমৎকার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করলেন তিনি। বললেন, বাংলাদেশের জন্য তার অনেক প্রেম আছে। মাঝে মাঝে তারা ওই ব্যক্তির মালিকানাধীন কারখানা পরিদর্শনের জন্য দুইজন একই গাড়িতে করে যেতেন। বাংলাদেশ কত সুন্দর দেশ, এ কথাটা ফিলিপ চেরি যেভাবে বলতেন তা মনে আছে তার। ১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ডেকে বলেছিলেন, তিনি তার বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারে কিনা। ওই ভদ্রলোক বলেছিলেন, তিনি সেটা করতে পারলে আনন্দিত হবেন। ফিলিপ চেরি কি নির্দিষ্ট কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলেন? আয়োজককে চেরি নিশ্চিত করলেন যে তিনি চান কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নাই। ওই অতিথি হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। সেই ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজ আয়োজিত হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে তাদের পাশাপাশি আয়োজক ও তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
আয়োজক বললেন, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তার স্ত্রী মনে করেন, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। ওই নৈশভোজে ওই দুই ব্যক্তির পৌঁছানোর পর পরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা তাদের নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে চাইছেন।
জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেলেন এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বললেন। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো ওনারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবারও বাগানে গেলেন এবং আলোচনা করতে লাগলেন। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছেন। অবশ্য, অভ্যুত্থানের পর সে নৈশভোজের আয়োজক ও তার পরিবার বুঝতে পারলো তাদের ‘ব্যবহার’ করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরদিন নৈশভোজের সে আয়োজক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। নৈশভোজ আয়োজনকারী সে ব্যক্তি ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তার চোখে ছিল অশ্রু। কীভাবে এটা হয়েছে তা জানতে চাইতে থাকেন তিনি। তিনি মুজিবের স্ত্রীকে ‘নিজের মায়ের মতো’ বলে উল্লেখ করেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে নৈশভোজ আয়োজনকারী ওই ব্যক্তি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?’
চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন, তাকে চা দিয়েছিলেন। চেরি তাকে বলছিলেন, ‘আমি জানি তুমি আমাদের পরিবারের খুব কাছের মানুষ। রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের গাড়িতে করে চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানে, জিয়া-চেরির এই ডিনার কোনও সামাজিক উদ্দেশ্যে নয়। তারা ভালো করেই জানত, সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়ার ভূমিকা কী ছিল। সেনাবাহিনীকে মেজরমুখী করতে জিয়া কী করেছেন। তারা জানত, ১৫ আগস্টের কিছু সময় আগে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের টার্গেট নেওয়া মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের কর্মকাণ্ড থেকে সেনাবাহিনীর মনোযোগ সরিয়ে দিতে তিনি কী করেছিলেন।
অনেকেই বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জেনারেল জিয়া এর বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।
চেরি-জিয়ার বৈঠক যে বাসায় হয়েছিল, ঢাকা সফরের সময় এক সন্ধ্যায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের কাছে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিলেন তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে যান। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমার পূর্বের লেখাতেও স্পষ্ট করেছি যে চেরি সিআইএ স্টেশন প্রধানই ছিলেন। একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেপথ্যে কারা?
আমরা এখন স্পষ্টই বুঝি যে সামরিক অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও আমেরিকার সিআইএ স্টেশন চিফের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্ট করে দূতাবাসের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যে মুজিব পতনের সঙ্গে জড়িত কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না করা হয়।
১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে শক্তিশালী করতে চাইছিলো। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় একটি আবাসিক ভবনে বৈঠকে বসেন। কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলির কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশমতো কাজ করেছিলেন।
ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন, রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনকে যদি এ সম্পর্কে অবগত না করা হতো, সেক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন হয়ে যেতে পারত। ফোর্টি কমিটি আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এখনকার ভয়ঙ্কর যোগসূত্রের মতো করেই সিআইএ-ওয়াশিংটন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অভ্যুত্থানটি সম্ভব করে তুলেছিল।
ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো। তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।