সেবা ডেস্ক: দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই ২০১৭-মার্চ ২০১৮) ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসীরা ১ হাজার ৭৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে প্রবাসী আয় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৬ কোটি ডলার। নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় খাতের ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ মাসে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক দুটির মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
প্রবাসীরা ১ ডলার পাঠালে বাংলাদেশে থাকা তাদের আত্মীয়রা এখন ব্যাংক থেকে পাচ্ছেন ৮৩ টাকা, আগে যা ছিল ৮০ টাকার নিচে। এ কারণেই প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আয় পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দেশে ডলার সংকটের কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারাও এখন আগের চেয়ে বেশি ডলার সংগ্রহ করছেন।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কারিগরি কমিটির প্রধান আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, বিদেশে যারা ডলার ধরে রেখেছিলেন, দাম বেশি পাওয়ায় তারা এখন দেশে ডলার পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে অবৈধ হুন্ডি প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে আনুষ্ঠানিক পথে প্রবাসী আয় বেড়ে গেছে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের প্রবাসী আয় বিতরণের অভিযোগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ১ হাজার ৮৬৩টি এজেন্ট হিসাব বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়েছে।
টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। গত জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩১ কোটি ২১ লাখ ডলার।
মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়াবে। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন প্রতিরোধ ও দমনে জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রবাসীদের রক্ত পানি করা পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থেই আজ বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। সরকার প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়ের ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। সবার সহযোগিতা ও সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপে নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।