গাজীপুর সিটি নির্বাচন বিষয়ে কিছু কথা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

S M Ashraful Azom
গাজীপুর সিটি নির্বাচন বিষয়ে কিছু কথা এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সেবা ডেস্ক: গত ২৬ জুন মঙ্গলবার দেশের বৃহৎ সিটি কর্পোরেশন গাজীপুরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতিক নিয়ে ২ লাখের বেশি ব্যবধানে বিএনপির হাসান উদ্দিনকে হারিয়ে আগামী ৫ বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

অনুষ্ঠেয় তিন সিটি নির্বাচন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর নির্বাচনকে নিয়ে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ।

গাজীপুর নির্বাচনে জয় পরাজয়ের পাঠ চুকিয়ে সবথেকে ইতিবাচক দিক হল কোনো রকম সহিংসতা ও নাশকতা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে এই নির্বাচন। আমাদের দেশের নির্বাচনী ইতিহাসেও নির্বাচনের মডেল হয়ে থাকবে এই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

নাশকতা এবং সহিংসতা করে নির্বাচনে কোন প্রকার সুবিধা পাওয়া যায়না বিএনপির নেতাদের এই বোধোদয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, এবং সরকারদলীয় নেতাদের জনসাধারণের উপর আস্থা রাখা এই তিনের সমন্বয়েই একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন কতৃক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিনা কারণে কাউকে হয়রানি না করার নির্দেশ প্রদানও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গাজীপুর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্বে দেশি বিদেশী সাংবাদিক সহ উপস্থিত ছিল বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দল। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

অনেকের মতে, এ নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আবার কেউ কেউ এই নির্বাচনকে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হিসেবেও আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজীপুর নির্বাচনকে সবাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন।

তাদের মতে, সর্বোপরি গাজীপুর নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো ছিল, ভোটার উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।

গাজীপুর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

তিনি বলেন, বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এত বড় এলাকার ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯টি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এটি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। যেসব স্থানে সমস্যা হয়েছে তা কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে হয়েছে।

সেখানে মেয়র পদে সমস্যা হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন পরিচালনায় ইসি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণে ভোট গ্রহণ বিলম্বিত হয়েছে। তবে সুষ্ঠ ভোট হওয়ায় সবাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।

গাজীপুরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) । এ সংস্থাটির পরিচালক ড. আবদুল আলীম বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট দেখেছি। অনেক কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও ভালো ছিল। নারী ভোটার উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিল।

ভোট গ্রহণের আগে থেকে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নানা অভিযোগ করে আসছিল। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিল, পক্ষপাতদুষ্ট গাজীপুর সিটি নির্বাচন করতে চায় সরকার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এবং দলটির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকও করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সুষ্ঠ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেয়েই মূলত বিএনপি গাজীপুর নির্বাচন বর্জন করা থেকে বিরত ছিল।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোতে নির্বাচন বানচালের উসিলায় বিএনপি জামায়াত কতৃক সহিংসতা পরিলক্ষিত হলেও খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনে তা পরিলক্ষিত হয়নি। এ থেকেই বিএনপির বোধোদয়ের প্রমাণ মেলে। দেশের আপামর জনসাধারণও সব দলের অংশগ্রহণে এমন সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন দেখতে চায়।

উল্লেখ্য সারাদেশ ব্যাপী ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি জামায়াতের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছিল শতাধিক মানুষ। তখন দেশের সর্বস্তরের পক্ষ থেকে বিএনপির উদ্দেশ্যে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এবার খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনে সহিংস কার্যক্রম থেকে সরে এসেছে বিএনপি।

আমাদের দেশের জন্য এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।

এছাড়া গাজীপুর এবং খুলনা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে তা বজায় থাকলে আগামীতে অনুষ্ঠেয় তিন সিটি নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠ হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।



ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top