সেবা ডেস্ক: ২০১২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গঠনের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শরিক দল গুলোর মধ্যে মতবিরোধ চলে আসছিল।
প্রথম দিকে জোটের অনৈক্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তা এক প্রকার প্রকাশ্যে চলে আসে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের শরিক দল গুলো অংশগ্রহণ করতে চাইলে তারেক জিয়ার পরামর্শে এবং নির্দেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তা প্রতিহতের সিদ্ধান্ত নেয়। জোটের নেতৃত্বদানকারী প্রধান শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিদ্ধান্ত জোটের শরিক দল গুলো মেনে নিলেও, অধিকাংশ শরিক দলগুলো বিএনপির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং খালেদার কারামুক্তির আন্দোলন নিয়ে ইদানিং জোটের মতবিরোধ আবারো চরম আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি তারেকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব লন্ডনে গেলে সেখানে তার সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে বক্তব্য প্রদানকালেও সেই ইংগিত দিয়েছেন তারেক।
ইফতার পার্টিতে তারেক রহমান তার বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়ই জোটের দল গুলোর কাছে ঐক্য ধরে রাখার অনুরোধ জানান। তিনি তার বক্তব্যে পূর্ববর্তী সকল দ্বন্দ্ব কিংবা মতবিরোধ ভুলে গিয়ে আবারো এক হয়ে আন্দোলন করার জন্য শরিক দলগুলোর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে তারেক রহমানের এমন কাকুতি মিনতি করে ঐক্য ধরে রাখার আহবান জানানোর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের ভাঙ্গন নিয়ে নতুন সুর উঠেছে।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারেকের বক্তব্য শুনে মত দিয়েছেন যে, তারেক তার বক্তব্যে বারবার জোটের ঐক্য ধরে রাখার কথা বলে মূলত জোটের ভেতর ভাঙ্গনের গুঞ্জনকে স্বীকার করে নিলেন।
দেরীতে হলেও তারেক জোটের শরিক দল গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করেই মূলত ঐক্য ধরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে জোটের শরিকরা ইতোমধ্যে বিএনপির প্রতি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন। জোটের শরিকরা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় আসন ভাগাভাগির নিশ্চয়তা পেতে চায়।
জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই মুহূর্তে তারা বিএনপি নেত্রীর মুক্তির কোন সম্ভাবনা দেখছেন না। কবে মুক্তি পাবেন তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
অথচ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। নির্বাচন বাদ দিয়ে বিএনপি নেতারা খালেদার মুক্তি নিয়েই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন। যদিও খালেদার মুক্তির জন্য কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি তারা।
এদিকে তারেকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একাধিক শরিক দলের নেতারা বলেন, তারেক সাহেবের কথার উপর ভরসা করা যায় না। তিনি তার দলের বিপর্যয়ের সময় ঐক্য ধরে রাখার কথা বললেও জোটের ঐক্য ধরে রাখার জন্য কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর থেকে তারেক তার দলের একাধিক নেতার সাথে বিভিন্ন সময় টেলিকনফারেন্সে বৈঠক করলেও, জোটের শরিক দল গুলোর সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।
এমনকি মির্জা ফখরুলের সাথে কথা বলতে তাকে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে নিয়ে গেছেন অথচ জোটের অনেক নেতা বার বার লন্ডনে গিয়েও তারেক সাহেবের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি।
এমতাবস্থায় জোটের যেসব শরিক দল জোট থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে তাদের নিয়ে বৈঠক করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন নতুন জোট গড়তে চাওয়া শরিক দলের একাধিক নেতা।
এখন দেখার অপেক্ষা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জোটের শরিক দলগুলো।