ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনার মধ্যকার আজকের ম্যাচটিকে ফাইনালের আগে আরো একটি ফাইনাল বলেই চিহ্নিত করেছেন ফুটবলবোদ্ধারা। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুলাই। তবে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের মধ্যকার ম্যাচটির উত্তেজনা যে ফাইনালের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় সেটি সবারই জানা। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা সর্বশেষ বিশ^কাপ জিতেছে ১৯৮৬ সালে।
এরপর মাঝখানে ৩২টি বছর কেটে গেলেও এখনো শিরোপার দেখা পায়নি দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে অবশ্য শিরোপা জয়ের বেশ কাছে চলে গিয়েছিল লিওনেল মেসিরা। কিন্তু সেবার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা না জেতার আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফিরতে হয়েছিল দিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের। তবে দীর্ঘ ৩২ বছরের শিরোপা না জেতার আক্ষেপ এবার ঘুচাতে চায় আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। তৃতীয়বারের মতো বিশ^কাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়ায় খেলতে আসা কোচ জর্জ সাম্পাওলির দলের পারফরমেন্স অবশ্য এখনো সমর্থকদের নজর কাড়তে পারেনি।
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাধা পার হওয়ার মতো কষ্ট করেই রাশিয়া বিশ^কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে আসা আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়া আর্জেন্টিনার জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকেট পেয়েছে সাম্পাওলির দল।
অন্যদিকে ১৯৯৮ সালের বিশ^চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স রাশিয়া বিশ^কাপে তাদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত করে দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশগ্রহণ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোর টিকেট পেয়েছে কোচ দিদিয়ের দেশ্যামের দল।
দ্বিতীয়বারের মতো বিশ^কাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে বেশ শক্তিশালী দল নিয়েই রাশিয়ায় এসেছে ফ্রান্স। জিদানের উত্তরসূরিরা যে রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আজকের ম্যাচে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের নজর থাকবে লিওনেল মেসির ওপর। প্রথম দুই ম্যাচে তেমন ভালো খেলতে না পারলেও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে ছন্দে ফিরেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর।
অন্যদিকে এন্তোনি গ্রিজম্যান, ওসমান ডেম্বেলে ও পল পগবাদের নিয়ে গড়া ফ্রান্সের আক্রমণভাগের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে নিঃসন্দেহে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের। দ্বিতীয় রাউন্ডের লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে অবশ্য অতীত রেকর্ডে এগিয়ে আছে মেসিরা। আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স এখন পর্যন্ত মোট ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে আর্জেন্টিনার ৬টি জয়ের বিপরীতে ফ্রান্সের জয় মাত্র ২টি। এ ছাড়া ড্র হয়েছে বাকি ৩টি ম্যাচ। বিশ^কাপের দুবারের মুখোমুখি লড়াইয়ের দুটিতেই ফ্রান্সকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
ধারণা করা হচ্ছে আজ হিগুয়েনকে বসিয়ে রেখে শুরুর একাদশেই ক্রিশ্চিয়ান পাভোনকে খেলাতে নামাবেন আর্জেন্টাইন কোচ। আগের ম্যাচের মতো আজ ফ্রান্সের বিপক্ষেও ৪-৪-২ ফরমেশনে দল সাজাতে পারেন সাম্পাওলি। অন্যদিকে দিদিয়ের দেশ্যাম দল সাজাতে পারেন সম্ভবত ৪-৩-২-১ ফরমেশনে। সব মিলিয়ে সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে আজ দারুণ এক লড়াই দেখতে যাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীরা।
