কোন কোটা’ই থাকবেনা, চাকরি হবে মেধায়: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
সরকারি চাকরি নিয়োগে যখন কেউই কোটা চায় না, তখন কোনো কোটাই আর থাকবে না, কোনো কোটার দরকার নেই বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে বারবার আন্দোলন হতে পারে, যাতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে, তাই যেন আর এ ধরনের দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল।
১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যখনই আমরা স্বীকৃতি পেলাম, তখনই এ ধরনের আন্দোলন শুরু হলো। একটা দেশ উন্নত হয় যখন তার জনগোষ্ঠী শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠে। তাই দেশ উন্নত করার জন্য আমরা বহুমুখী ট্রেনিং, জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার উন্নয়নে যা যা দরকার তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতো ব্যবস্থা করেছি যেন ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হয়।
‘এতো অর্জিত শিক্ষা ব্যবহার হওয়ার কথা গঠনমূলক কাজে। কিন্তু এখন ব্যবহার হচ্ছে গুজব ছড়ানোর কাজে। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করলাম, এটার সুযোগ নিয়ে সেদিন এক ছাত্রের মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হলো, তখন ছাত্রীরাও হলের গেট ভেঙে বেরিয়ে আসে। কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়িত্ব কে নিতো?’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে উপাচার্যের বাসভবনে রাতের আঁধারে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হলো ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। আমরাও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু কখনো ভিসির বাড়িতে হামলা হতে পারে কেউ চিন্তাও করতে পারে না। পুরো পাকিস্তানি বাহিনীর মতো। সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। ভিসির ওপর আঘাত করতে চেয়েছে। একতলা-দোতলা সব তছনছ করে দিয়েছে। ক্যামেরা সরিয়ে নিয়ে গেছে। কতো পরিকল্পিত হামলা। এই হামলার নিন্দা জানাই, যারা এ হামলা করেছে, তারা ছাত্র বলে বিশ্বাস করি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ভিসির বাসভবনে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে, এরইমধ্যে গোয়েন্দারা কাজ শুরু করেছেন। লুটপাট করে জিনিসপত্র কোথায় নেওয়া হলো, সেটার হিসাব দিতে হবে তাদের। এক্ষেত্রে ছাত্র ও শিক্ষকরা সহযোগিতা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা যখন দাবি তুললো, আমরা তো বসে নেই। আমি নির্দেশ দিলাম, ওদের দাবিটা কী শোনার জন্য, আমাদের মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব গিয়ে বসলেন। তারা জানালেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। অনেকে মেনে নিলো, অনেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে গেলো। কেন? যখন আলোচনা হচ্ছে তখন সময় না দিয়ে আবার আন্দোলন কেন? এটা কী ধরনের কথা?
‘মেয়েরা যে গভীর রাতে হল থেকে বেরিয়ে এলো, আমি ঘুমাতে পারিনি। নানককে বলেছি তুমি দেখো। নানক রাতে গিয়েই কথা বলেছে। তারা কোনো কিছু মানবে না, আন্দোলন চালিয়ে গেলো।
আন্দোলনকারীদের অনেকে সন্তান এমনকি অনেকে নাতি-নাতনির বয়সী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কিসে ভালো হয় আমি কি বুঝি না?
কোটা থেকে প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাক্রম থেকে প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন দিন ধরে রাস্তায় চৈত্রের রোদে তারা আন্দোলন করছে, তারা তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছে, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে পারছে না।
‘যেহেতু কেউই চায় না, তাই সকালে ছাত্রলীগকে বলে দিয়েছি, কোনো কোটাই থাকবে না। এতে তো আর কারও আপত্তি থাকবে না। মেয়েরাও দেখি রাস্তায় নেমে গেছে। তার মানে তারাও কোটা চায় না। আমি খুশি, তারা পরীক্ষা দিয়ে চলে আসবে। বারবার আন্দোলন হতে পারে, যাতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে, তাই যেন আর এ ধরনের দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’
গত কয়েকদিন ধরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন বিদ্যমান ব্যবস্থায় চাকরিতে নিয়োগে যে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে, তা কমিয়ে আনতে হবে।