সেবা ডেস্ক:
-আজ দিন
পেরিয়ে রাতের আঁধার নামলেই আবির্ভাব ঘটবে মহাপুণ্যে ঘেরা রজনী। এ রাত
মহাপবিত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল মেরাজের। এ রাতে আমাদের প্রিয়নবী হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাঈল আলাহিস্সালামের
সাথে পবিত্র কাবা হতে ভূ-মধ্যসাগরের পূর্বতীর ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র
বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে সত্তর হাজার
নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার দিদার লাভ করেন এবং
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি অবলোকন
করেন সৃষ্টি জগতের সমস্ত কিছুর অপার রহস্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়াসাল্লাম-এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ‘মেরাজ’।
মেরাজ
সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন-“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা
তিনি, যিনি তার স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা
পর্যন্ত ভ্রমণ করালেন, যার চতুর্দিকে আমার রহমত ঘিরে রেখেছেন-যেন আমি
কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই।
মেরাজ
ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরা নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যকোনো নবী এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। এ রজনীতেই
মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও
যথাযথ মর্যাদায় মুসলিম জাহানের সঙ্গে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও আজ
কোরআনখানি, নফল সালাত, জিকির-আসকার, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া-দরুদ পাঠ ও বিশেষ
মোনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র শবে মেরাজ পালন করবেন।
মেরাজ
শব্দটি আরবী, অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ। মেরাজের বড়দাগে অর্থ দাঁড়ায়-সপ্তম আসমান,
সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন ও ধনুক কিংবা তার চেয়ে কম
দূরত্বে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য পর্যন্ত ভ্রমণ। এ ছিল আল্লাহ তাআলার মহান
কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সত্যতার পক্ষে এক বিরাট আলামত। জ্ঞানীদের
জন্য উপদেশ, মোমিনদের জন্য প্রমাণ, হেদায়েত, নেয়ামত, রহমত, মহান আল্লাহর
একান্ত সান্নিধ্যে হাজির হওয়া, ঊর্ধ্বালোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন,
অদৃশ্য ভাগ্য সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে জ্ঞান
অর্জন, স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন, নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ এবং সর্বোপরি
এটিকে একটি অনন্য মুজিযা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
পারিভাষিক
অর্থে নবুয়তের একাদশ সালের ২৭ রজবের রাতের শেষ প্রহরে হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈলের (আ.) সাথে আল্লাহর নির্দেশে
বায়তুল্লাহ হতে বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত ‘বোরাক্বে’ ভ্রমণ, অতঃপর সেখান
থেকে অলৌকিক সিঁড়ির মাধ্যমে সপ্ত আসমান পেরিয়ে আরশে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন
পুনরায় বায়তুল মুক্বাদ্দাস হয়ে বোরাক্বে আরোহণ করে প্রভাতের আগেই মক্কায়
নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের ঘটনাকে ‘মেরাজ’ বলা হয়।