সেবা ডেস্ক:-গুঞ্জন ছিল অবসর ভেঙে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এখনো তার ফেরার আশায় অনেকেই। কিন্তু যে অধ্যায় তিনি শেষ করে এসেছেন সেখানে
আর ফিরে যেতে চান না। তবে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফিতে যে দল ঘোষণা হয়েছে
তাদের প্রতি আস্থা রাখতে চান বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি
মনে করেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দূর হতে জয়ের কোনো বিকল্প
নেই। তবে তিনি এও চান না দল কোনো চাপ নিয়ে খেলুক।
গতকাল দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের
কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে মাশরাফি তুলে ধরেছেন নিজের অবস্থানের নানা কথা।
সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো- প্রশ্ন: সবাই আশায় ছিল আপনি টি-টোয়েন্টিতে ফিরবেন? মাশরাফি:
যে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে তা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আর আমি নিজেও কোথাও
বলিনি যে ফিরবো। এখন দল শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে, সবাই দোয়া করেন সেখানে যেন
ছেলেরা ভালো করতে পারে।
প্রশ্ন: যে দল আছে সেখানে পেস বিভাগ আপনাকে ছাড়া কতটা শক্তিশালী?
মাশরাফি: আমি মনে করি না দুর্বল। ঠিকই আছে। কারণ মোস্তাফিজ, রুবেল ও তাসকিন বেশ অভিজ্ঞ। বিশেষ করে রুবেল তো অনেক দিন থেকে বাংলাদেশ দলে খেলছে ওর অভিজ্ঞতা আরো বেশি। এছাড়াও নতুনদের মধ্যে রনি (আবু হায়দার) ও রাহী (আবু জায়েদ) দু’জন আছে। এটাই সুযোগ নতুনদের পরখ করে নেয়ার। আশাকরি ভালো করবে।
তবে আমি মনে
করি ওদের উপর চাপ দেয়া ঠিক হবে না। কারণ দলের অবস্থা একটু অস্থির। আবার
এখনো জানি না সাকিবের কী অবস্থা হবে! আবার এটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সব
মিলিয়ে একটু কঠিনই হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ১-২ ম্যাচ জিতে গেলে
পরিস্থিতি বদলে যাবে। গেল কয় মাস ধরে যা চলছে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসা
উচিত।
প্রশ্ন: সাকিবের অভাব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা মানসিক চাপ তৈরি করছে কিনা?
মাশরাফি: আসলে কঠিন সময়ে ব্যাপারটা হয় কি দলের অভিজ্ঞ ও সেরা ক্রিকেটাররা থাকলে বেশ সুবিধা হয়। আর সাকিবের যে অভিজ্ঞতা সেটি দলে আর কারো নেইও। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অভিজ্ঞতা সবার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ ও যেসব বড় বড় ম্যাচ খেলেছে সারা বিশ্বে সেগুলো অনেক বেশি মেটার করে। কারণ অভিজ্ঞতা একটা বিষয় যা কিনতে পাওয়া যায় না।
অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে নিজের অর্জন করতে হয়।
হ্যাঁ কিছু ম্যাচ সাকিব খেলতে পারেনি আমরা জিতেছি ঠিক আছে। আবার সাকিব ছিল
না বলে ২২০ তাড়া করে আমরা ফাইনালে জিততে পারিনি সেটিও মানার মতো নয়। তবে
সাকিবের থাকাটা অনেক বড় বিষয়। ওর দলে থাকাটাই কিন্তু দলের জন্য বাড়তি
পাওয়া। আসলে ফলাফল আসেনি বলেই সাকিবের অনুপস্থিতিটা আমাদের ভোগাচ্ছে। তবে
এসব নিয়ে চাপ নেয়ার কিছুই নেই।
প্রশ্ন: আপনি সব সময় বলতেন সাথে একজন ব্যাটসম্যানের অভাবের কথা। আরিফুলকে দিয়ে সেটি কতটা পূরণ করা সম্ভব? মাশরাফি: এখনই তো আমাদের নতুনদের পরীক্ষা করে নেয়ার সময়। ২০২০ বিশ্বকাপের দিকে তাকান সেখানে কিন্তু আমাদের এমন একজনকে দরকার যে শেষ মুহূর্তে নেমে টার্গেট তাড়া করে ১০-১৫ বলে ৩০-৪০ রান করে দিয়ে আসবে।
আবার আগে ব্যাট করলেও শেষ
দিকে দ্রুত কিছু রান তুলে বড় টার্গেট দিয়ে আসবে। এমন একজন ব্যাটসম্যান এখনই
দেখার সময়। আপনি যদি আরো এক বছর পর খুঁজতে যান তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।
আমি মনে করি এটি খুবই ভালো পদক্ষেপ যে কিছু ক্রিকেটারকে টি-টোয়েন্টির জন্য
তৈরি করা। বিশ্বের যে কোনো দলের দিকে তাকান যেমন শ্রীলঙ্কায় থিসারা পেরেরা
আছে, ভারতে হারদিক পান্ডিয়া আছে। এ জয়গাতে আমাদের অনেক বড় ঘাটতি। এখানে
আরিফুলরা যদি ফিট হতে পারে তাহলে দলের জন্য ভালো। টি- টোয়েন্টিতে আমাদেরও
ভালো করার সুযোগ তৈরি হবে। তবে ওদের সময় দিতে হবে।
প্রশ্ন: দলের তরুণদের ডিসিপ্লিন নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বিশেষ করে সাব্বিরের বিষয়ে। আপনার তাদের প্রতি কোনো বার্তা আছে ?
প্রশ্ন: দলের তরুণদের ডিসিপ্লিন নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বিশেষ করে সাব্বিরের বিষয়ে। আপনার তাদের প্রতি কোনো বার্তা আছে ?
মাশরাফি: ছোট বেলা থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি খেলোয়াড়দের জীবনে অনেক ডিসিপ্লিন থাকতে হয়। আমি মনে করি শুধু খেলোয়াড়দের জীবনেই নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে ডিসিপ্লিন না হলে চলে না। আমি কারো নাম বলতে চাই না। আমি মনে করি, আমার নিজের থেকে শুরু করে সবারই শৃঙ্খলা থাকা উচিত। তাহলে বড় মানুষ ও বড় ক্রিকেটার হওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন: দলের পেসারদের ভুলগুলো নিয়ে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা?
মাশরাফি: আমি এখন খেলছি, কোচিংটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু রুবেল থেকে শুরু করে সতীর্থ সবার সঙ্গেই আমি ভুল ত্রুটিগুলো আলোচনা করি। এর বাইরে কোচেরা আছেন তাদের সঙ্গেও আলোচনা করতে বলি। আমি যতক্ষণ কাছে থাকি চেষ্টা করি নিজের ভুলগুলোও সবার সঙ্গে আলোচনা করে শুধরে নিতে। এটি প্রতিটি বোলারেরই উচিত নিজেদের ভুলগুলো এখনই ঠিক করে নেয়ার।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে পেসারদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে কিনা? মাশরাফি: ইচ্ছা থাকতেও পারে। সবাই বলে, ভবিষ্যতের চিন্তা জ্ঞানীরা করে রাখে। তবে আমি করি না। সময় হলে দেখবো কি করা যায়।
প্রশ্ন: প্রতিপক্ষ ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াইয়ের কৌশল কী হওয়া উচিত?
মাশরাফি: যেহেতু খেলাটা টি-টোয়েন্টি তাই আমি বলবো প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আর আমিও বড় কিছু আশা করছি না। কারণ আমি আশা করলে ওদের উপর একটা চাপ পড়বে। আমি চাই না ওরা কোনো কিছু ভেবে চাপ নিয়ে মাঠে নামুক। আমি টিভিতে খেলা দেখবো, আশাকরি ওরা ভালো করবে। দলের প্রতি আমার শুভ কামনা।
প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব?
মাশরাফি: আসলে এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এখন বাংলাদেশের মানুষ আশা করে আমরা মাঠে নামলে জিতবো। তাই দেখবেন ১-২টা ম্যাচ জিতলেই পরিস্থিতি সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রশ্ন: টেস্টে ফেরার ভাবনা কতটা আছে?
মাশরাফি: আমিতো টেস্টে ফিরতেই চাই। কিন্তু বললেই তো হলো না। আমাকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে প্রমাণ করতে হবে যে আমি কতটা ফিট আছি। তারপরই তো নির্বাচকরা আমাকে নিয়ে ভাববে