শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম(প্রতিনিধি): এসএসসি পরিক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ। বাকী ছিল কেবল পরিক্ষার কেন্দ্রে যাওয়া। সহ-পাঠিদের সাথে সেও একই গাড়ীতে যাবে বলে সব ঠিকঠাক হয়েছে। পরিক্ষার প্রস্তুতিও শেষ। এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী আব্দুল খালেক। কিন্তু তার এসএসসি পরিক্ষা দেওয়া হলোনা বাকী শিক্ষার্থীদের মতো। মা বাবার সুযোগ হয়নি বাবা তোমার পরিক্ষা কেমন হয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করার। তার বড় হওয়ার সব স্বপ্ন আজ বিলিন হয়ে গেছে কোন অজানায়! সে আর ফিরে আসবেনা, স্বপ্ন গুলোও তাকে আর তাড়িত করে পড়তে বসাবেনা পড়ার টেবিলে। নিয়তি কারো পিছু ছাড়েনা। নিয়তির বাস্তবতায় সব হেরে যায়। হেরেছে ক্যান্সারাক্রান্ত খালেক। সৃষ্টিকর্তা যা চাহে তার সব কিছুই ঘটে যাবে অনায়াসে।
সকাল ১০ টায় এসএসসি পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক ঘন্টা আগেই সকাল ৯টায় মৃত্যুপথের যাত্রী হলেন এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী আবদুল খালেক। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল আব্দুল খালেক। পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ হলেও অবশেষে তাকে আর পরীক্ষা দিতে হলোনা। পর পাড়ের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন সে না ফেরার দেশে। শীলকুপ ইউপি'র শাহ আলমের পুত্র আবদুল খালেক (১৮) দীর্ঘ তিন বছর ধরে মরন ব্যাধি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ক্যান্সার যুদ্ধে পরাজয় হয়ে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলো সে আর দেওয়া হলোনা পরিক্ষা। মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত আবদুল খালেকের আশা ছিল অন্য পরীক্ষার্থী ভাইদের মতো সেও এসএসসি পরীক্ষা দেবে, পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট নিয়ে মা,বাবা, শিক্ষক ও পাড়া-পড়শির মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু নিয়তির একি খেলা? ঘাতক ক্যান্সার তার সেই আশা পুরন করতে দেয়নি, পরীক্ষা শুরুর ঠিক একঘণ্টা আগেই না পেরার দেশে চলে যেতে হলো তাকে। পরিবার সূত্রে জানাযায় তারা তিন ভাই তিন বোন। তাদের মধ্যে আব্দুল খালেক ছিল সর্ব কনিষ্ট। শান্ত অচঞ্চল স্বভাবের একজন ছেলে সে। কখনো কারো সাথে দুষ্টুমি করার মানসিকতা ছিলোনা তার।
বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, আব্দুল খালেক আমার প্রতিষ্টানের বিজ্ঞান বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। শান্তশিষ্ট একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সে ছিলো সবার প্রিয়। তার অকাল মৃত্যুতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে আবদুল খালেকের বাবা শাহ আলম যেন শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। তাঁরা কান্না জড়িত কন্ঠে প্রতিবেদককে ব্যক্ত করেন ছেলের নানা অনুভূতির কথা। সহকর্মীর এই করুণ মৃত্যুশোক বুকে নিয়েই গতকাল চাম্বল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা দিয়েছেন সহপাঠী পরীক্ষার্থীরা। তার সহপাঠি জেহাজুল ইসলাম বোবা কান্নায় বলেন, খালেক আমাদের ব্যাচের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো, খুবই নম্রস্বভাবের বন্ধু ছিলো আমাদের। তার এ অকালে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টা আমাদেরকে অশ্রুসিক্ত করেছে। খালেক আর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেনা এমনটি ভাবতেই কঠিন লাগছে বললেন তার অন্য সহপাঠী আহমদ হোসেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।