তিন বছরেও শেষ হয়নি বিচার, জামিনে ১১ আসামি

S M Ashraful Azom
কেরানীগঞ্জের বহুল আলোচিত শিশু পরাগ মণ্ডল অপহরণের তিন বছর পরও মামলার বিচার শেষ হয়নি। জামিনে মুক্তি পেয়েছে ১১ আসামি। পুলিশ পাহারায় পরাগ স্কুলে যাওয়া-আসা করলেও চরম নিরাপত্তায় ভুগছেন তার স্বজনরা। পরাগের বাবা বিমল মণ্ডল বলেছেন, আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ পরাগ অপহরণ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।
 
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মামলার কার্যক্রম গত এক বছর বন্ধ ছিল। কয়েকদিন আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পরই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
 
গত ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর সকালে মা ও দিদির সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাড্যা পশ্চিমপাড়া কালিবাড়ি এলাকার বাসার সামনে থেকে মানুষরূপী দানবরা মুক্তিপণের দাবিতে তাকে অপহরণ করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়েছিল পরাগের দিদি পিনাকি মণ্ডল, মা লিপি মণ্ডল ও প্রাইভেটকার চালক নজরুল ইসলাম।
 
আর এ অপহরণের মধ্যদিয়ে মণ্ডল পরিবারের এই ছোট সদস্যটি পরিচিতি পায় দেশবাসীর কাছে। পরাগ হয়ে ওঠে সবার আপনজন। মণ্ডল পরিবারের কষ্টের অংশীদার হয় দেশের ছোট-বড় সবাই। ঘটনার দুইদিন (শ্বাসরুদ্ধকর ৬৫ ঘন্টা) পর অচেতন অবস্থায় পরাগকে কেরানীগঞ্জের আঁটিপাড়া বাজার এলাকার রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। মায়ের কোলে ফেরে পরাগ। পরিবারের সঙ্গে দেশবাসীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
 
চার্জশিট দাখিল
 
অপহরণের ঘটনায় পরাগ মণ্ডলের ঠাকুরমা সাবিত্রী মণ্ডল বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ১২ জনকে আসামি করে ২০১৩ সালের ২১ মার্চ ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে— আমীর হোসেন, তার স্ত্রী বিউটি, যুবলীগ নেতা জুয়েল মোল্লা, জাহিদুল হাসান, আলী ওরফে রিফাত, কালা চান, আলফাজ, রিজভী আহমেদ অনিক, আবুল কাশেম, মামুন হোসেন ও আল আমিন। আর একই বছর ২০ অক্টোবর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মামলার প্রধান আসামি আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আইনের ৭, ৮, ৩০সহ দণ্ডবিধি আইনের ৩০৭ ধারা এবং অপর ১১ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৭, ৮ ও ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
 
পরাগের বাবা
 
পরাগ মণ্ডলের বাবা ঢাকার তাঁতী বাজারের জে কে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিমল মণ্ডল বলেন, গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঐ দিন জেল কর্তৃপক্ষ আসামিদের হাজির না করায় শুনানি হয়নি। এ অবস্থায় পরে শুনানির কথা ছিল। কিন্তু  চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে আসামি মামুনের একটি রিট আবেদন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শুনানি স্থগিত করেন। আদালত এ সময় জানায়, হাইকোর্টের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত থাকবে।
 
পরাগের নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি বলেন, পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজ-খবর রাখছে। তারপরও আতংক কাটছে না। সারাক্ষণ এক অজানা আশংকা মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। মামলার ১২ আসামিদের মধ্যে আমীর হোসেন ছাড়া সবাই জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ফলে এ আশংকার মাত্রাটা দিন দিন আরো বাড়ছে। কেউ কোন ধরনের হুমকি দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কেউ কোন ধরনের হুমকি দিচ্ছে না। কিন্তু দিতেই বা কতক্ষণ।
 
তিনি আরো বলেন, পরাগ অপহরণ মামলার অন্যতম আসামি মামুন হোসেন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরও তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। মামুন দলবল নিয়ে ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বারিধারায় ৫ নম্বর রোডে চীনা নাগরিক ইয়াংশুকে অপরহরণ করার চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় লোকজন মামুনকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ করে। মামুনের সহযোগীরা প্রাইভেটকার যোগে পালিয়ে যায়। এ মামলায় জামিন পেয়েছে মামুন হোসেন।
 
পরাগ মণ্ডলের নিরাপত্তার ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকে পরাগের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ করে শুভড্যা এলাকায় নিয়োজিত পুলিশের টহল টিমকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তারা সে নির্দেশ মতোই পরাগের দিকে নজর রাখছে। নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হবার কিছু নেই।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top