আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল রোমাঞ্চ

S M Ashraful Azom
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ মানেই ফুটবল ভক্তদের জন্য উৎসবের উপলক্ষ।  আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায় শুরু বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই দল। 
 
সারা বিশ্বের ফুটবল সমর্থকদের নজরে থাকা  এই ম্যাচে আর্জেন্টাইন ভক্তরা যখন তিন তারকাকে হারিয়ে মহাদুশ্চিন্তায়, সেসময় ব্রাজিলের জন্য সুখবর হয়ে এসেছে সেরা তারকা নেইমারের ফেরা। চার ম্যাচের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে হলুদ জার্সিতে আবার মাঠে নামবেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বার্সেলোনা ফুটবলারটি। তাই মহারণের আগেই যেন কিছুটা এগিয়ে থাকলো সেলেকাওরা।
 
এবারের বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার শুরুটা এক কথায় যাচ্ছেতাই। নিজেদের মাঠে ইকুয়েডরের কাছে ২-০ ব্যবধানে হারের পর প্যারাগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে এমনিতেই চাপে আছেন মার্টিনো। তারকা খচিত দল নিয়েও কোপা আমেরিকায় ব্যর্থতা, বাছাইপর্বের দুই খেলায় মাত্র এক পয়েন্ট- সবমিলিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে তার খেলার ধরন নিয়েই। বুয়েন্স আয়ার্সে আগামীকাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে কোনো ধরনের হোঁচট খেলে আর্জেন্টাইনদের রাশিয়া বিশ্বকাপের খেলার স্বপ্নে একটু হলেও ধাক্কা খাবে।
 
 
ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা আর্জেন্টিনার মতো না হলেও প্রত্যাশানুযায়ী শুরু করতে পারেননি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বটি। শুরুর ম্যাচেই চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় তারা। অবশ্য পরের খেলায় ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় কোচ দুঙ্গার শিষ্যরা। নেইমারের ফেরা কাল বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগ করবে সেলেকাওদের।
 
মেসি-অ্যাগুয়েরো-তেভেজদের ছাড়াও ব্রাজিলের বিপক্ষে শঙ্কা রয়েছে হাভিয়ের পাস্তোরের খেলা নিয়েও। গুরুত্বপূর্ণ সতীর্থদের না পেয়েও অবশ্য নিজেদের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর প্রত্যয় ফুটে উঠেছে পিএসজি তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার কণ্ঠে। ডি মারিয়া বলেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের পাব না। বিশেষ করে মেসি এবং কুনের (তেভেজ) অনুপস্থিতি অপূরণীয়। তারপরও আমাদের মাঠে তিন পয়েন্ট অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
 
ডি মারিয়া যতই বলুন, কাজটি মোটেও সহজ হবে না আর্জেন্টিনার জন্য। মেসি-অ্যাগুয়েরোর উপস্থিতি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে দিচ্ছে একটি পরিসংখ্যান। ২০১১ সালের কোপা আমেরিকার পর সর্বোচ্চ তিন গোলদাতার মধ্যে মেসির অবদান ১৫টি, অ্যাগুয়েরোর আটটি। মাঝখানে থাকা ১২ গোল করা গঞ্জালো হিগুয়াইন থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে নাপোলি তারকার ফর্মহীনতা চোখে পড়ার মতো।
 
 
বিপরীতে নেইমার আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। বার্সেলোনায় সর্বশেষ সাত খেলায় ১০ গোল করেছেন। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ডান পায়ে ফ্লিক করে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে করা গোল এখনও চোখে লেগে আছে ফুটবল ভক্তদের। ফিলিপে কটিনহো-ডগলাস কস্তারাও রয়েছেন তাদের সেরা ফর্মে।
 
তার উপর দুঙ্গার ব্রাজিলের সামনে আসলেই কেমন যেন ছন্দপতন ঘটে আর্জেন্টাইনদের। ছয় বছর আগে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচের কথাই ধরা যাক। সেবার মেসির শহর রোজারিওতে দুঙ্গার শিষ্যদের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল কোচ দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটাই দু’দলের সর্বশেষ দেখা। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে সেই দুর্দান্ত আর্জেন্টিনাও থেমে গেছে দুঙ্গার কৌশলের সামনে। পাঁচ খেলায় ১৬ গোল করে শুরু করলেও ফাইনালে ব্রাজিল কোচটির কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা।
 
দু’দলের শতবর্ষের পুরনো লড়াইয়েও এগিয়ে ব্রাজিল। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও ছয়বারের দেখায় তিনটিতে জিতেছে সেলেকাওরা। আর্জেন্টিনার জয় দুটিতে।
 
১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই বুয়েন্স আয়ার্সেই শুরু হয়েছিল বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ। ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুরুটা নিজের করে নিয়েছিল আর্জেন্টাইনরা। দেখা যাক প্রতিকূলতা কাটিয়েও শতবর্ষ পরে বুয়েন্স আয়ার্সে আবার শুরুর ইতিহাসটাই ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা আর্জেন্টিনা। গোল ডট কম ও সকারওয়ে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top