ব্যাংকগুলোতে যেখানে আমানতের সুদের হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ, সেখানে সরকারের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে (জিপিএফ) বা সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলে রাখা টাকায় সুদ মেলে ১৩.৫ শতাংশ। এই উচ্চ সুদের কারণে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের মূল বেতনের পুরোটাই জমাতেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে। ১৯৭৯ সাল থেকে চলে আসা এমন সঞ্চয়ে এবার রাশ টানল সরকার। এখন থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের মূল বেতনের ২৫ শতাংশের বেশি প্রভিডেন্ট ফান্ডে রাখতে পারবেন না। প্রভিডেন্ট ফান্ডে রাখার সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক এক গেজেটে ‘জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড রুলস, ১৯৭৯’-এর ৯(১)(বি) সংশোধিত ধারায় এই সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবী তার মূল বেতনের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখতে পারবেন। ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনেরও একই ধরনের সুপারিশ ছিল।
১৯৭৯ সালে প্রণীত প্রভিডেন্ট ফান্ড বিধিমালায় চাকরিজীবীরা তাদের মূল বেতনের সর্বনিম্ন কত শতাংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখতে পারবেন সেটি নির্দিষ্ট করা থাকলেও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা ছিল না। ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মূল বেতনের পুরোটাই এ তহবিলে জমা রাখছেন। আবার অনেক চাকরিজীবী দম্পতি রয়েছেন, যাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীর মূল বেতনের পুরোটাই এ তহবিলে জমাচ্ছেন।
১৯৭৯ সালের বিধির ৯(১)(বি) ধারায় বলা হয়েছে, যাদের মূল বেতন মাসে ৩০০ টাকা পর্যন্ত, তারা মূল বেতনের সর্বনিম্ন ১ শতাংশ অর্থ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখতে পারবেন। ৩০১ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেতনধারীরা মূল বেতনের ৬ শতাংশ, ৫০১ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন হলে ৯ শতাংশ, এক হাজার এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন হলে ১২ শতাংশ এবং মূল বেতন দুই হাজার টাকার বেশি হলে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে রাখতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৯ সালে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিধিমালা প্রণয়নের সময় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ছিল খুবই কম। সে কারণেই তখন প্রভিডেন্ট ফান্ডে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ জমা রাখা যাবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু এখন বেতন অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া উচ্চ সুদহারের কারণে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মূল বেতনের পুরোটাই প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাচ্ছেন। বিপুল অর্থ জমার কারণে সরকারের সুদ ব্যয়ও বাড়ছে। সার্বিক বিবেচনায় ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন এ তহবিলে অর্থ রাখার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের আলোকেই মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত জমা রাখার বিধান করে গেজেট জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগ।