সেবা ডেস্ক: আমাদের দেশে শিক্ষক শব্দটা মনে হয় যেন ভয়ানক কিছু। ছাত্রছাত্রীরা পারতপক্ষে শিক্ষকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে আমার নিজের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতাও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালীন ভাইভা পরীক্ষার কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি। সরাসরি শিক্ষকদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলাটা আমাদের জন্য চরম কঠিন বিষয়। কিন্তু এখানে পড়াশোনা করতে এসে দেখলাম বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো।
একটা ছোট ঘটনা বলি। একবার সুপারভাইজারের সঙ্গে মিটিং হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১টায়। আমি তার রুমে সময়মতো হাজির হতেই দেখি, তিনি পরিচালকের সঙ্গে গভীর আলোচনায় মগ্ন। পরে জানতে পেরেছিলাম, পরিচালক এক মাস বিদেশ থাকবেন বলে সব দায়িত্ব আমার সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে দেখামাত্রই দু'জন হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকি আলোচনা শেষ করার জন্য ১০ মিনিট সময় চাইলেন। ভাবখানা এমন যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে তাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। বললাম, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, আপনাদের আলোচনা শেষ হলেই আবার আসব। বাইরে অপেক্ষা করার কথা শুনে তারা আরও লজ্জাবোধের সুরে আমার অফিস কক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেন এবং তারা আমাকে ডেকে আনবেন বলে জানালেন। ঘটনার আকর্ষিকতায় হতভম্ব হয়ে ফিরে এলাম নিজের অফিস কক্ষে। চিন্তা করতে থাকলাম, বিষয়টা কী হলো। আমাদের দেশ হলে হয়তো সুপারভাইজারকে সময়মতো রুমেই পাওয়া যেত না। অথবা এমন অবস্থায় সোজাসুজি জবাব দিতেন, আচ্ছা তুমি আজ না হয় পরে এক সময় এসো, আমরা এখন খুবই ব্যস্ত। যা হোক, পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই তিনি হকচকিয়ে এলেন আমার রুমে। অন্তত তিনবার দুঃখিত বলে তার রুমে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। পথেই দেখি দাঁড়িয়ে আছেন পরিচালক। তিনিও তিন-চারবার দুঃখ প্রকাশ আর মঙ্গল কামনা করে বিদায় নিলেন। আমি তখনও ইতস্ততবোধ করছি তাদের এমন সুমধুর আপ্যায়নে। সে মুহূর্তে মিটিংয়ের আলোচ্যসূচির চেয়ে ছাত্র-শিক্ষকের এমন মজাদার অভিজ্ঞতাকেই স্মরণ করছিলাম। পরে আমার মেয়ের কাছে জেনেছি তার স্কুলের শিক্ষকরাও নাকি একই রকম।
আমি বলছি না যে, আমাদের দেশের সব শিক্ষক ছাত্রদের অবমূল্যায়ন করেন। অনেক ভালো শিক্ষক রয়েছেন যাদের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের কল্যাণেই আমরা এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তারপরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক সম্বন্ধে হতাশা প্রকাশ করেন। এর জন্য ব্যক্তি শিক্ষক দায়ী না হলেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, উন্নয়নের প্রতি নজর দেওয়া জরুরি। এখানে একজন ছাত্রের সময়ের মূল্য আর শিক্ষকের সময়ের মূল্যের মধ্যে তফাত নেই। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনগুলোকে গৌণ হিসেবে দেখা হয়।
ষ শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী)
একটা ছোট ঘটনা বলি। একবার সুপারভাইজারের সঙ্গে মিটিং হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১টায়। আমি তার রুমে সময়মতো হাজির হতেই দেখি, তিনি পরিচালকের সঙ্গে গভীর আলোচনায় মগ্ন। পরে জানতে পেরেছিলাম, পরিচালক এক মাস বিদেশ থাকবেন বলে সব দায়িত্ব আমার সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে দেখামাত্রই দু'জন হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকি আলোচনা শেষ করার জন্য ১০ মিনিট সময় চাইলেন। ভাবখানা এমন যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে তাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। বললাম, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, আপনাদের আলোচনা শেষ হলেই আবার আসব। বাইরে অপেক্ষা করার কথা শুনে তারা আরও লজ্জাবোধের সুরে আমার অফিস কক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেন এবং তারা আমাকে ডেকে আনবেন বলে জানালেন। ঘটনার আকর্ষিকতায় হতভম্ব হয়ে ফিরে এলাম নিজের অফিস কক্ষে। চিন্তা করতে থাকলাম, বিষয়টা কী হলো। আমাদের দেশ হলে হয়তো সুপারভাইজারকে সময়মতো রুমেই পাওয়া যেত না। অথবা এমন অবস্থায় সোজাসুজি জবাব দিতেন, আচ্ছা তুমি আজ না হয় পরে এক সময় এসো, আমরা এখন খুবই ব্যস্ত। যা হোক, পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই তিনি হকচকিয়ে এলেন আমার রুমে। অন্তত তিনবার দুঃখিত বলে তার রুমে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। পথেই দেখি দাঁড়িয়ে আছেন পরিচালক। তিনিও তিন-চারবার দুঃখ প্রকাশ আর মঙ্গল কামনা করে বিদায় নিলেন। আমি তখনও ইতস্ততবোধ করছি তাদের এমন সুমধুর আপ্যায়নে। সে মুহূর্তে মিটিংয়ের আলোচ্যসূচির চেয়ে ছাত্র-শিক্ষকের এমন মজাদার অভিজ্ঞতাকেই স্মরণ করছিলাম। পরে আমার মেয়ের কাছে জেনেছি তার স্কুলের শিক্ষকরাও নাকি একই রকম।
আমি বলছি না যে, আমাদের দেশের সব শিক্ষক ছাত্রদের অবমূল্যায়ন করেন। অনেক ভালো শিক্ষক রয়েছেন যাদের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের কল্যাণেই আমরা এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তারপরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক সম্বন্ধে হতাশা প্রকাশ করেন। এর জন্য ব্যক্তি শিক্ষক দায়ী না হলেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, উন্নয়নের প্রতি নজর দেওয়া জরুরি। এখানে একজন ছাত্রের সময়ের মূল্য আর শিক্ষকের সময়ের মূল্যের মধ্যে তফাত নেই। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনগুলোকে গৌণ হিসেবে দেখা হয়।
ষ শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী)