ধুলাবালি এমনই এক জিনিস যাকে এড়িয়ে চলা যায় না। বাসা, অফিস, রাস্তায় সর্বত্রই এর মুখোমুখি হতে হয়। ধুলা এলার্জিজনিত এজমার একটি অন্যতম সমস্যা। সাধারণত রাস্তায় যে ধুলা পাওয়া যায় তা অজৈব পদার্থ তাতে হাঁচি, কাশি বা হাঁপানির কষ্ট ততটা হয় না। কিন্তু ঘরের মধ্যে অনেকদিন ধরে জমে থাকা ধুলা এলার্জিক এজমার একটি অন্যতম কারণ। কারণ তাতে মাইট নামে একটি আর্থোপড জাতীয় জীব থাকার জন্য। তাই আমাদের কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১. বাসা থেকে কার্পেট সরিয়ে তুলতে হবে। আর যদি সরিয়ে না ফেলেন, তাহলে কার্পেটের ধুলা পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে।
২. ঘামে ভেজা তোশক ও বালিশের ধুলোয় মাইট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ, তাই সম্ভব হলে চেন টানা ধুলা প্রতিরোধক ঢাকনা ব্যবহার করা দরকার। সম্ভব হলে তোশকের পবিবর্তে মাদুর পেতে শোয়া যেতে পারে।
৩. অ্যাজমা রোগীদের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। রোগী যেন বিছানা ঝাড়া বা ঘর পরিষ্কার না করে। যদি একান্তই করতে হয় তবে মুখে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
৪. রাস্তায় বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।
৫. ঘরের স্যাঁতসেঁতে অংশ যেমন বাথরুম, স্টোররুম, বেইজমেন্ট ইত্যাদি স্থানে ছত্রাক বা ছাতা পড়ে। বায়ুবাহিত ছত্রাকের কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি হতে পারে।
৬. নিজের ঘর ছত্রাক মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাই বাসার পানি চলাচল ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঘরের পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো স্থানে ছত্রাক জন্মালে পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে তা পরিষ্কার করে স্থানটি ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
৭. অনেকেই ঘরে পোষা প্রাণী পালন করতে পছন্দ করেন। আর সব গরম রক্তের প্রাণীর চামড়া থেকে মরা কোষ উঠে। বাসায় থাকা পোষা প্রাণীর চামড়ার মরা কোষ এবং লোমের কারণেও অনেক ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে। শীতকালে পোষা প্রাণী ঘরের ভেতরে সময় কাটায় বেশি। এখান থেকেও অ্যালার্জির লক্ষন দেখা দিতে পারে। এর থেকে বাঁচতে পোষা প্রাণীকে বিছানা ও ঘরের অন্যান্য বহুল-ব্যবহৃত জায়গাগুলো থেকে দূরে রাখতে হবে। আর সপ্তাহে অন্তত একবার প্রিয় প্রাণীকে গোসল করানো উচিত।
৮. শীতের সময় আরাম করতে অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা উপভোগ করেন। কাঠ বা কাগজ পোড়ানোর ধোয়া আর যানবাহনের ধোয়া যা আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষিত করছে। আর দূষণ এবং ধোয়া থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। যাদের এরকম সমস্যা আছে তারা ধোয়ার হাত থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
ওষুধ প্রয়োগ
ওষুধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে অ্যালার্জির উপশম অনেকটা পাওয়া যায়। এ রোগের প্রধান ওষুধ হলো ইনহেলার স্টেরয়েড। ইনহেলার স্টেরয়েড ব্যবহারে রোগের লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হয়। যেহেতু স্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাই একনাগাড়ে বেশি দিন ব্যবহার করা যায় না। যতদিন ব্যবহার করা যায় ততদিনই ভালো এবং বন্ধ করলেই লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
ইমুনোথেরাপি
অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। ইমুরোথেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো মাইট দ্বারা অ্যাজমার সমস্যা হচ্ছে সেই এলারজেন স্বল্প মাত্রায় শরীরে প্রয়োগ করা হয়। ক্রমান্বয়ে বেশি মাত্রায় দেয়া হয় যাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় কিন্তু শরীরের ইমুউন সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটায় বা শরীরের অ্যালার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে অর্থাৎ আইজিইকে আইজিজিতে পরিণত করে যাতে দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি ওষুধ ছাড়া নিয়ন্ত্রিত হয়।