খুলনায় আড়াই মাসে ১৫ হত্যাকাণ্ড

S M Ashraful Azom
খুলনায় গত আড়াই মাসে ১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে নগরীর নিউমার্কেট টেক্সটাইল মিল এলাকায় চারতলা একটি বাড়িতে ঢুকে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বিধবা নারীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এভাবে হঠাত্ করে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
গত রবিবার নিহত শেফালী রাণী বাড়িতে একা রান্নাঘরে ছিলেন। তিনি দুর্বৃৃত্তদের দেখে চিত্কার শুরু করলে তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় স্থানীয়রা সজল বণিক নামে এক ঘাতককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশের ধারণা ডাকাতি করতে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত ২৯ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে নগরীর দৌলতপুরে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি দলের ক্যাডার শহীদুল ইসলাম ওরফে হজি শহীদ। ওই দিন বিকাল চারটায় শহীদ নিজের প্রাইভেটকারে করে নগরীর পাবলার বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রাইভেটকারটি দৌলতপুর ইসলামী ব্যাংকের কাছে পৌঁছলে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন সশস্ত্র যুবক এসে উপর্যপুরি গুলি করে তাকে হত্যা করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যায়। এ ঘটনার পর থেকে খুলনার আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হয়ে আছে। পুলিশ ধারণা করছে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসাবে আরো হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
গত ৪ অক্টোবর দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে রাবেয়া নামে এক শিশুকে শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় প্রতিবেশী যুবক রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নগরীর বয়রা এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত শেখ ইলিয়াস হোসেন (৬৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা চিকিত্সাধীন অবস্থায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান। এর কয়েকদিন আগে তিনি নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন।
২১ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আব্দুল জলিল নামে এক নৈশ প্রহরীকে দুই নির্মাণ শ্রমিক শাবল দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলা থেকে দুই ঘাতককে আটক করে পুলিশ। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে রূপসা উপজেলার রহিমনগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে ফারুক হোসেন মোল্লা নামে এক কর্মকর্তা নিহত হন।
১৯ সেপ্টেম্বর নগরীর লবণচরা থানার বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকায় দুর্বৃত্তরা  বৃদ্ধ পিতা ইলিয়াস চৌধুরী ও তার মেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণ করে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়নের মইখালী বিলের একটি মত্স্য ঘের থেকে নান্টু শেখ নামে এক ঘের মালিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। এর আগের দিন ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর দৌলতপুরের দেয়ানা মোল্লাপাড়ায় তরিকুল ইসলাম নামে এক যুবককে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ জানায়। এছাড়া গত ৩১ আগস্ট ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে গৃহবধূ রেশমা ও তার শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরের দিন নিহত গৃহবধূ রেশমার স্বামী মাহবুব ডুমুরিয়া থানায় হাজির হয়ে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।
এদিকে, গত ২৬ অক্টোবর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জানানো হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা জেলায় ১০টি খুন ও চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বলা হয়, খুলনা নগরীর ৮ থানায় গত সেপ্টেম্বর মাসে ২টি ছিনতাই, ১৩টি চুরি, ৫টি খুন, একটি ধর্ষণ এবং ১৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ১৩৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর আগে আগস্ট মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৩২টি।
খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, খুনের ঘটনা ঘটতেই পারে। নগরীতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নগরীতে কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়নি।
খুলনার ডিসি মোস্তফা  কামাল বলেন, সব খুনের ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সম্পর্ক নেই। কারণ, বেশির ভাগ খুন পারিবারিক কোন্দলের কারণে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top