সেবা ডেস্ক: পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানের ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু জনিকে বেকসুর খালাস ও জামিনে থাকা মিজানুর রহমান রনিকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রায়ে ঐশী রহমানের মাকে কফি খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যার দায়ে মামলার প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঐশী রাহমানকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও তার বাবাকে হত্যার অভিযোগে পৃথকভাবে একই সাজা প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
৩৭৪ ধারা মোতাবেক হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এই অপরাধে সহায়তাকারী মামলার অন্যতম আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে ৩০২ ও ১০৯ ধারায় খুনের অপরাধ থেকে খালাস দিয়েছেন। পাশাপাশি মামলার অপর আসামি মিজানুল রহমান রনিকে ১১২ ধারা মোতাবেক আসামিকে আশ্রয় প্রদানের দায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল দিয়েছেন আদালত।
এর আগে, ১১টায় প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে তিনজন নারী পুলিশ দিয়ে ঘিরে আদালতে আনা হয় ঐশীকে। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় গোলাপী ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢাকা ছিল। আদালতে এসেছেন এ মামলায় একমাত্র জামিনে থাকা মিজানুর রহমান রনিও।
এসময় মিজানুর রহমান রনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘আশা করছি, আমি বেকসুর খালাস পাবো। তারপরও আল্লাহ যা করেন।’
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে গ্রেপ্তার করা হয় অন্য দুই আসামি রনি ও জনিকে।
গত বছরের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেন। গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। ঐশীর মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলে গত বছরের ৩০ নভেম্বর নতুন করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
এ মামলায় ঐশীসহ তিনজন আসামি। অপর দুই আসামি হলেন, কারাগারে আটক ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি ও জামিনে থাকা অপর আসামি মিজানুর রহমান রনি। বাসার গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে সুমিকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। গত বছরের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
গত ১৩ অক্টোবর মামলাটির প্রধান আসামি ঐশীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন আদালত। আত্মপক্ষ সমর্থনকালে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তার বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করেন ঐশী। অন্য দুই আসামি জনি ও রনিও নিজেদের নিদোর্ষ বলে দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
বয়সের সমর্থনে একটি সনদপত্র আদালতে দাখিল করে ঐশী দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। পুলিশ নির্যাতন করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। তার বাবা-মা যখন খুন হন তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। বন্ধুর বাসায় হুইস্কি খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। তার বাবা-মাকে কে বা কারা খুন করেন তাও তিনি জানেন না।
গত ২০ অক্টোবর ও ৪ নভেম্বর পক্ষে বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান রানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ঐশীর চাচা মো. মশিহুর রহমান রুবেলসহ ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার প্রায় ১ বছর পর আজ (বৃহস্পতিবার) এ রায় ঘোষণা করা হল।